অন্তিম_যাত্রার_গদ্য_ভাবনা
রিজিয়া বেগম
অথচ একা একা
নিরব নিস্তব্ধ কোথাও
শীতল – নির্মোহ ‘মৃত্যু’
কখনও কাঙ্খিত ছিলো না আমার।
কাঙ্খিত ছিলো না
শেষ যাত্রা পথের শুরুতে
উৎকণ্ঠিত প্রিয় মুখের অনুপস্থিতি।
মৃত্যুর গ্লাসে চুমুক দেয়ার ক্ষণ
একটু কাব্যিক হয়ে উঠুক;
লালন করছি প্রতিনিয়ত।
জীবনে আর কিছু না হউক!
যাওয়ার ক্ষণে শিয়রে বসে
তোমার উৎকণ্ঠা,
অধীরতা নিয়ে
আমার হাত শক্ত করে
তোমার হাতের মুঠোতে
ধরে থাকার দৃশ্যটা
কল্পনা করেছি
কোটি, কোটিবার!
তোমার হাত ছুঁয়েই
পাড়ি জমাচ্ছি আমি
অনন্তলোকে!
এ যেন এক দারুণ ক্ষণ!
এ যেন এক মহাকাব্য!
মৃত্যু ভাবনা আসলেই
তোমার মুখাবয়ব খুঁজে ফিরেছি;
পাশে থেকো।
এমন সময় তুমি থেকো পাশে,
আমার মাথার কাছে।
আজকাল ভয় ধরানো
কোন অসুস্থতাতেও
উৎকণ্ঠা নেই আমার।
কাউকে জানানোর নেই –
“কষ্ট পাচ্ছি।
ভয় পাচ্ছি!
যাওয়ার সময় এলো বুঝি!
আমার পাশে একটু থাকো।
মাথায় একটু হাত রাখো। ”
সময়টা এমনই!
আজকাল
মানুষের শেষ যাত্রার ক্ষণ
কাব্যিক নয়।
পাশবিক ঢের।
পাশবিক মৃত্যুর ক্ষণ
মানবতার কফিনে শেষ পেরেক।
অমন মৃত্যুর চেয়ে
কোন নির্জনতায়
একাকী মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করে
ধীরে ধীরে মৃত্যুর কোলে
নিজেকে সমর্পন করা
একটু বেশি কাব্যিক ।
ওতে মানবিক মানুষের
নির্মমতার ইতিহাস রচনার
কোন আশংকা থাকে না।
আজকাল প্রতিদিন হরদম যা হচ্ছে!
তেমন কিছু হওয়ার ভয় নেই।
দূরের মানুষগুলো
প্রত্যাহিকতায় না দেখে
আবিষ্কার করবে
নির্জনতায় পরে আছে লাশ
কোন আবদ্ধ ঘরে।
দায়িত্বের খাতিরে লাশের
সদগতি হবে।
খাঁচা ছাড়া প্রাণের কথা
আর বাজবে না কোথাও।
এরপর উৎকণ্ঠিত
কোন মুখ দেখার স্বপ্ন নেই,
তখন স্বপ্ন থাকে না চোখে!
মস্তিষ্কের অখন্ড অবসর।
কোন বিশেষ হাতের স্পর্শে
মনোবল দৃঢ় হয়ে উঠারও কিছু নেই।
লাশের কাছে
আর কোন মায়া থাকে না,
আর কোন ইচ্ছা জমা থাকে না।
পৃথিবীর সবাই
একই সৌভাগ্য নিয়ে জন্মে না।
সবাই পায়না আব্বার মতো
অনন্তলোকে পাড়ি দেবার ক্ষণে
মহাকাব্য।
সাড়ে তিনঘন্টা ধরে
মাথার কাছে বসে বসে
আম্মার দোওয়া,- সূরা পাঠ।
একসাথে ৩৫ বছর পার করা
মানুষটাকে কালেমা পড়ানোর ক্ষণ।
“আল্লাহ, আল্লাহ—”
বলে স্রষ্টাকে ডেকে ডেকে
পিতার চারপাশে ঘিরে থাকা
সন্তানদের মায়া, উৎকণ্ঠার কাব্যিকতা
সবার ভাগ্যে জুটে না।
তার চেয়ে বরং এভাবে হউক
অন্তিম পথের যাত্রা!
একাকী, নির্জনে, পরিজনহীন সময়ে
মৃত্যুর পেয়ালায় চুমুক দিতে দিতে
চলে যাওয়া হোক অনন্তলোকে।
bzqxvna