জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান ও বিরোধী দলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের এমপি বলেছেন, দেশে সাধারণ মানুষের জন্য করোনার কোন চিকিৎসা নেই। রাজধানীর বড় কয়েকটি হাসপাতালে কিছু চিকিৎসা থাকলেও দেশের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে করোনার কোন চিকিৎসা নেই বললেই চলে। রাজধানীর বেশ কয়েকটি বেসরকারী হাসপাতালে করোনার চিকিৎসা আছে কিন্তু অত্যন্ত ব্যয় বহুল। দেশের ৯০ ভাগ মানুষের বেসরকারী হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়ার সামর্থ নেই।
শনিবার জাপা চেয়ারম্যানের বনানী কার্যালয় মিলনায়তনে জাতীয় তরুন পার্টির প্রতিনিধি সভায় জি এম কাদের আরো বলেন, স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন- আমাদের দেশে মৃত্যুর হার কম। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, যেখানে চিকিৎসা নেই, হাসপাতালে বেড নেই, প্রয়োজনীয় চিকিৎসক নেই- সেখানে মৃত্যুর হার কম হলে মন্ত্রীর কৃতিত্ব কী? দেশের সাধারণ মানুষ ঔষুধ ও চিকিৎসা ছাড়াই মহান আল্লাহর রহমতে বেঁচে যাচ্ছেন। আবার যারা শারীরিকভাবে দূর্বল তারা মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়ছেন।
দেশে বেকারত্বের হার বেড়ে যাচ্ছে একথা উল্লেখ করে সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির লাগাম টানতে পারছেনা সরকার। নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে।
জি এম কাদের বলেন, প্রয়াত রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ উচ্চ আদালতের রায় অনুযায়ী একজন বৈধ রাষ্ট্র প্রধান হিসেবে ৩ জোটের রুপরেখা অনুযায়ী সাংবিধানিকভাবেই রাষ্ট্রক্ষমতা হস্তান্তর করেছেন। তাকে কখনোই স্বৈরাচার বলা যাবেনা। ’৯১ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টিকে প্রচার প্রচারনা করতে দেয়া হয়নি, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদসহ জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীদের জেলে আটকে রাখা হয়েছিলো। ৩ জোটের রুপরেখা অনুযায়ী জাতীয় পার্টির সাথে বেঙ্গমানী করা হয়েছে, জাতীয় পার্টির সাথে কথা রখেনি। তারপরও জেলে বন্দি থেকেই হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ২ বার ৫টি করে আসনে নির্বাচিত হয়েছিলেন। কোন নির্বাচনেই এরশাদ পরাজিত হননি, এতে প্রমাণ হয় পল্লীবন্ধু ছিলেন জননন্দিত নেতা।
তিনি বলেন ’৯১ সালের পর থেকে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি গণতন্ত্রের নামে সংসদীয় একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে। যারা সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠন করে, সেই দলের প্রধানই হন সংসদীয় দলের নেতা এবং সরকার প্রধান। ’৭০ ধারার কারণে সরকার প্রধানের কথার বাইরে দলের কেউই ভোট দিতে পারে না। সরকার প্রধান যা বলেন তাই সংসদে পাশ হয়, যতটুকু বলেন ততটুকুই পাশ হয়। এটা গণতন্ত্র নয়, এটাকে বলা যায় সংসদীয় এক নায়কতন্ত্র। সংসদীয় গণতন্ত্রে যেখানে সংসদ সরকারকে নিয়ন্ত্রণ করবে সেখানে সরকারই সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করছে। এক নায়কতন্ত্রে দুর্নীতি বেড়ে যায়। আওয়ামী লীগের আমলে ১ বার এবং বিএনপির আমলে ৪বার বাংলাদেশ দুর্নীতিতে বিশ^ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলো।
এরশাদের শাসনামলে দেশে দুর্নীতি ছিলনা উল্লেখ করে তিনি বলেন, তখন আইনের শাসন ছিল। পল্লীবন্ধু মৃত্যুদন্ডের বিধান রেখে এসিড সন্ত্রাস বন্ধ করতে আইন বাস্তবায়ন করেছিলেন। দেশ থেকে এসিড সন্ত্রাস বন্ধ করতে সমর্থ হয়েছিলেন তিনি। এখন আইন আছে কিন্তু খুন, ধর্ষণ ও নারী নির্যাতন বন্ধ হয়নি। কারন আইন সবার জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য হচ্ছে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ আছে। আমরা দেশের মানুষকে আইনের শাসন ও সামজিক ন্যায় বিচার ভিত্তিক নতুন বাংলাদেশ উপহার দিয়ে এরশাদ-এর নতুন বাংলাদেশ গড়বো।
জাতীয় তরুন পার্টির আহ্বায়ক মোঃ জাকির হোসেন মৃধার সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব মোড়ল জিয়াউর রহমানের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত প্রতিনিধি সভার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দলের মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু বলেন, দেশের তরুন সমাজ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে মাদকের ছোবলে। মানুষের কাছে পদ্মাসেতুর চেয়ে তরুন সমাজ রক্ষাই জরুরি। তরুন সমাজ সন্ত্রাস, চাঁদাবাজী, দলবাজী ও দখলবাজীতে জড়িয়ে পড়েছে। তরুন সমাজ ধ্বংস হয়ে যাবে এজন্য ১৯৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধারা জীবনবাজী রেখে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেনি
তিনি বলেন উপনিবেসিক ব্যবস্থা ভেঙে এরশাদ দেশে নানা সংস্কার করেছেন। উপজেলা পরিষদ সৃষ্টি করে তৃণমূলে মানুষের অধিকার পৌছে দিয়েছিলেন। এলজিইডি প্রতিষ্ঠা করে সারাদেশের রাস্তা-ঘাট উন্নয়নে যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। বলেন দুটি দলের দুঃশাসন, দুর্নীতি আর নিপিড়নে দেশের মানুষের নাভিশ^াস উঠেছে। দেশের মানুষ পরিবর্তন চায়, দুটি দলের হাত থেকে মুক্তি পেতে চায়। আগামী নির্বাচনে গোলাম মোহাম্মদ কাদের এর নেতৃত্বে জাতীয় পার্টি ভোট বিপ্লবের মাধ্যমে সরকার গঠন করে দেশের মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করবে।
বক্তব্য রাখেন- প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভ রায়, এ্যাড. রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, জহিরুল ইসলাম জহির, ষ্টা মাহমুদুর রহমান মাহমুদ, আরিফুর রহমান খান, গোলাম মোহাম্মদ রাজু, ক এনাম জয়নাল আবেদিন, আনোয়ার হোসেন তোতা, সিরাজুল ইসলাম, সৌরভ হোসেন সবুজ, কাউসার আহমেদ, মোজাম্মেল হোসেন মায়া, আমজাদ হোসেন প্রধান, হেলাল বিশ্বাস, মিজানুর রহমান মিজান, জহিরুল ইসলাম ফারুক, বেলাল আহমেদ, একেএম সুজন, সাইফুল ইসলাম প্রমুখ।